বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১
জাকিরুল আহসান/সাইফউদ্দিন মিলন।।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ব্যপকভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। মহামারী এই ভাইরাসে সারাদেশে এ পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর গ্রামাঞ্চলের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন আশঙ্কাজনক হারে। সমসাময়িক এ বিষয় নিয়ে রূপালী বার্তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকার দিয়েছেন মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সাইয়েদুর রহমান।
রূপালী বার্তা: মুলাদী উপজেলার বর্তমান করোনা সংক্রমন পরিস্থিতি কি?
ডা: সাইয়েদুর রহমান: গতবছরের তুলনায় সংক্রমনের হার বেশি। এর কারণ সারাদেশের মতো মুলাদীতেও একই, কেউ সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এখনও করোনা বিষয়ক স্বাস্থবিধি মানার ব্যাপারে উদাসিনতা রয়েছে। যে কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
রূপালী বার্তা: মুলাদী উপজেলায় নারীরা বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ কি?
ডা: সাইয়েদুর রহমান: যিনি মাস্ক পড়বেন না স্বাস্থবিধি মানবেন না তিনি তো আক্রান্ত হবেনই, তিনি পুরুষ হন আর নারী হন। অতএব আক্রান্ত থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে এবং স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে।
রূপালী বার্তা: মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর করোনা রোগীর চিকিৎসার প্রস্তুতি কেমন?
ডা: সাইয়েদুর রহমান: করোনার শুরুতে আমরা ০৭ টি বেডের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু এই বেডের তুলনায় রোগী আসছে বেশি, তাই নতুন করে আরো ০৭ টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে মোট ১৪ টি বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে আমাদের এখানে যেহেতু আই.সি.ইউ নেই। তাই গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরকে আমরা দ্রুত বরিশাল সদর হাসপাতাল বা শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
রূপালী বার্তা: মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ অক্সিজেনের কোন সংকট আছে কি?
ডা: সাইয়েদুর রহমান: না, মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ বর্তমানে যে কয়জন রোগী আছেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। মাননিয় শিক্ষা সচিব মহোদয়ের উদ্যোগে আমাকে বেশ কিছু সুরক্ষা সামগ্রি, অক্সিজেন, সিলিন্ডার, পাল্স অক্সিমিটার, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যা, আমাদের সামর্থকে বৃদ্ধি করছে। তবে যে হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমাদের ভবিষ্যতে সংকটে পরার সম্ভাবনা বেশী। এখন রোগিরা সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আইসোলেশনে থাকে এবং সাধারণ মানুষ সবাই মাস্ক ব্যবহার করে তবে হয়ত আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।
রূপালী বার্তা: রোগী ও সাধারণ মানুষের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
ডা: সাইয়েদুর রহমান: প্রতিদিনই আমরা নমুনা পরীক্ষা করি। এতে যারা করোনা পজেটিভ হন, তাদের মধ্য থেকে একটু বেশি অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর বাকিদের বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়। এসব রোগীদের সঙ্গে প্রতিদিনই হাসপাতালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় এবং রোগীরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরামর্শ নেন।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তদের সেবায় মুলাদী হাসপাতালের সবাই কাজ করছে। আমরা চেষ্টায় কোন ঘাটতি রাখছি না, বাকিটা আল্লাহ ভরশা। সবশেষ পরামর্শ হচ্ছে যারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা সুস্থ আছেন তাদের সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে।
আমরা সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলেই এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে পারি। তাই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া অযথা বাইরে ঘোরাফেরা না করি।
এদিকে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বে নানা অব্যবস্থাপনা এবং অপ্রতুলতার কারণে একটা সময় স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হলেও বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সাইয়েদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে পটপরিবর্তন হতে থাকে। তার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি, উৎসাহ এবং দক্ষ প্রশাসনিক পরিচালনা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ ফিরে এসেছে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি কোভিড-১৯ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও আইসোলেশনে ও কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও রোগীদের উন্নত সেবা প্রদান করায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডা. মো: সাইয়েদুর রহমান জনপ্রশাসন পদক ‘কাইযেন-২০১৭’ ও মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অর্জন করেছে হেলথ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৯।